বাংলাদেশে অনেকেই ইসলামিক ব্যাংক নিয়ে নানা প্রশ্ন করেন, বিশেষ করে লোন নেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে। ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার সময় কিছু ঝামেলায় পড়ার কারণ মূলত এই যে, ইসলামী ব্যাংকের লোন দেওয়ার নিয়ম-কানুন সাধারণ ব্যাংকের থেকে আলাদা। এই লেখায় আমরা সেই পার্থক্যগুলো সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করেছি।
ইসলামী ব্যাংকগুলোতে সুদের বদলে মুনাফার ভিত্তিতে লেনদেন হয়। অর্থাৎ, এখানে যেভাবে লোন দেয়া হয় এবং ফিরিয়ে নেওয়া হয় তা সুদের মতো নয়, বরং মুনাফার একটা অংশ হিসেবে ব্যাংক লাভ করে। যদিও পুরোপুরি সুদমুক্ত ব্যবস্থা বজায় রাখা কঠিন, ইসলামী ব্যাংকগুলো সর্বদা সুদমুক্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হতে চায়।
লোন নিতে হলে আপনাকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিয়ে ব্যাংকের শর্তাবলী মেনে আবেদন করতে হয়। ইসলামী ব্যাংক সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো প্রকল্প বা সম্পদ বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে লোন প্রদান করে। এছাড়া, কিছু ফি বা চার্জও থাকতে পারে যা ব্যাংকিং কার্যক্রমের অংশ হিসেবে থাকে।
ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম
ইসলামী ব্যাংকের ভাষায় লোনকে সাধারণত “ইনভেস্টমেন্ট” বলা হয়। যদি আপনি ইসলামী ব্যাংক থেকে ইনভেস্টমেন্ট নিতে চান, তাহলে প্রথমে আপনার ব্যবসা বা প্রকল্পের জন্য উপযুক্ত ইনভেস্টমেন্ট খাত নির্বাচন করতে হবে। এরপর, নিকটস্থ ইসলামী ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করে আবেদন করতে হবে।
ইসলামী ব্যাংকে লোনের পরিবর্তে ইনভেস্টমেন্ট বলা হয় কারণ তাদের লোন প্রদানের পদ্ধতি অন্য ব্যাংকের থেকে আলাদা। এখানে মূলত ব্যবসা বা প্রকল্পে অর্থায়ন করা হয়, যা ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে বিবেচিত হয় এবং সুদের পরিবর্তে মুনাফা ভাগাভাগি করা হয়।
ইনভেস্টমেন্ট গ্রহণের জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হবে এবং ব্যাংকের নীতিমালা মেনে চলতে হবে। সাধারণত, ইসলামী ব্যাংক আপনার আয়ের উপর ভিত্তি করে কতটুকু ইনভেস্টমেন্ট দেওয়া যাবে তা নির্ধারণ করে।
যোগ্যতা হিসেবে ব্যাংক আপনার আয়ের সঠিক প্রমাণপত্র, ব্যবসার পরিকল্পনা, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করবে। এছাড়া, ব্যাংকের নির্ধারিত নিয়ম-কানুন মেনে ইনভেস্টমেন্টের খাত নির্বাচন ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন সম্পন্ন করতে হবে।
আয় বিবেচনা করেই ব্যাংক আপনার ইনভেস্টমেন্ট অনুমোদন করে এবং এর মাধ্যমে তারা আপনার লোন নেওয়ার ক্ষমতা মূল্যায়ন করে থাকে।
ইসলামী ব্যাংক লোন নেওয়ার পদ্ধতি
ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন, অর্থাৎ “ইনভেস্টমেন্ট” গ্রহণের জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোতে লোনকে সাধারণত “ইনভেস্টমেন্ট” নামে ডাকা হয়। কারণ এখানে সুদের পরিবর্তে মুনাফার ভিত্তিতে লেনদেন হয়। ব্যাংক আপনাকে কতটুকু মুনাফা দিবেন, কিভাবে প্রফিট শেয়ার করা হবে, এবং অতিরিক্ত কোনো ফি বা চার্জ আছে কি না—এসব বিষয়েরও স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাবেন।
ইসলামী ব্যাংকগুলি মূলত ব্যবসা ও প্রকল্পের উন্নয়নে সাহায্য করার জন্য ইনভেস্টমেন্ট প্রদান করে থাকে এবং লাভ-লোকসানের অংশীদার হিসেবে কাজ করে।
ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্র
ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন বা ইনভেস্টমেন্ট সাধারণত নিম্নলিখিত ছয়টি প্রধান ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয়:
- নতুন বাড়ি নির্মাণ: নতুন বাড়ি তৈরির জন্য
- ফ্ল্যাট ক্রয়: নতুন বা পুরাতন ফ্ল্যাট কেনার জন্য
- বাড়ি সংস্কার ও বর্ধিতকরণ: বাড়ির মেরামত বা সম্প্রসারণের জন্য
- ব্যবসা পরিচালনা: ব্যবসা শুরু বা সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ
- গাড়ি ক্রয়: নতুন বা ব্যবহৃত গাড়ি কেনার জন্য
- শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত: শিক্ষাগত খরচ বা চিকিৎসার জন্য
শরীয়াহ্ মোতাবেক অন্যান্য ইনভেস্টমেন্ট খাত
ইসলামী ব্যাংক শরীয়াহ্ অনুযায়ী নিচের খাতে ইনভেস্টমেন্ট করে থাকে:
- শিল্প: নতুন শিল্প প্রকল্প বা কারখানা স্থাপন ও সম্প্রসারণ
- ব্যবসা-বাণিজ্য: ব্যবসার আর্থিক চাহিদা পূরণ
- কৃষি: কৃষি উন্নয়ন ও ফসল উৎপাদন
- রিয়াল এস্টেট: জমি বা অন্যান্য রিয়াল এস্টেট প্রকল্পে বিনিয়োগ
এভাবে ইসলামী ব্যাংক শরীয়াহ্ অনুযায়ী বৈধ সকল খাতে ইনভেস্টমেন্ট দিয়ে আপনাকে অর্থায়নে সহায়তা করে থাকে, যা আপনার বিভিন্ন প্রয়োজন ও পরিকল্পনা পূরণে সাহায্য করবে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে ব্লকচেইন প্রযুক্তি কী?
ইসলামি ব্যাংক হোম লোন
ইসলামী ব্যাংক থেকে বাড়ি নির্মাণের জন্য লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা সাধারণত সর্বোচ্চ ৩০ লক্ষ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনভেস্টমেন্ট প্রদান করে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আপনি যদি বাড়ি তৈরির জন্য ইনভেস্টমেন্ট গ্রহণ করেন, তাহলে ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী যেমন রড, সিমেন্ট, বালি ইত্যাদি সরাসরি সরবরাহ করে।
ব্যাংক এসব সামগ্রী সরবরাহ করে নিজেই কেনাকাটা করার পরিবর্তে, তারা নিশ্চিত করে যে নির্মাণ সামগ্রী সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে এবং নির্মাণ কাজের গুণগত মান বজায় রয়েছে। কারণ তারা এই লোনকে ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে দেখে, যেখানে টাকা সরাসরি গ্রাহকের হাতে না দিয়ে প্রকল্পের জন্য সরাসরি ব্যয় হয়।
এভাবেই ইসলামী ব্যাংক বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরণের সহায়তা প্রদান করে, যা সুদ ভিত্তিক নয়, বরং ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
যদি আপনি বাড়ি সংস্কার বা বর্ধিতকরণের জন্য লোন নিতে চান, তাহলে ইসলামী ব্যাংক থেকে সর্বনিম্ন ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনভেস্টমেন্ট পাওয়া সম্ভব।
হোম ইনভেস্টমেন্ট পেতে সাধারণত দুই জন সচ্ছল গ্যারান্টারের প্রয়োজন হয় এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র জমা দিতে হয়। সেসব নথিপত্র হলো:
- জমির দলিল ও খতিয়ান নম্বর
- এনইসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট)
- গ্যারান্টারদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট
- খতিয়ান নামধারী রশিদ
ইসলামী ব্যাংক বাণিজ্য লোন
একটি দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যবসা-বাণিজ্য ও তার গতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের ব্যবসায়িক খাতকে আরও শক্তিশালী করতে এবং উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদানের জন্য ইসলামী ব্যাংক বাণিজ্য লোন বা ইনভেস্টমেন্ট প্রদান করে থাকে।
সহজ শর্তে এবং অল্প কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে আপনি ইসলামী ব্যাংক থেকে বাণিজ্য ইনভেস্টমেন্ট নিতে পারবেন। বাণিজ্য ইনভেস্টমেন্টের জন্য সাধারণত যা যা প্রয়োজন হয়:
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র ও সদ্য তোলা ছবি
- ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স এবং আয়-ব্যয়ের হিসাবের প্রয়োজনীয় দলিলপত্র
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দলিলপত্র
- গ্যারান্টারের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ইসলামী ব্যাংক কৃষি লোন
বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান কৃষি দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশের কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা সুশৃঙ্খল ও উন্নত জীবনযাপন করতে পারছি এবং কৃষি খাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল ও কৃষি পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেন, যা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। কৃষি খাতের উন্নয়ন এবং কৃষকদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধিই দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি।
কৃষি লোন পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- কৃষি জমির দলিলপত্র
- বর্তমান আয়-উৎস সংক্রান্ত প্রমাণপত্র
- কৃষি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলে, সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ সনদপত্র
ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন
চাকরির উপর নির্ভর না থেকে নিজের ব্যবসা শুরু করে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তাদের লোন প্রদান করে থাকে। ব্যবসার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ এবং নতুন উদ্যোক্তা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
উদ্যোক্তা লোন নিতে হলে আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হবে। সাধারণত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলো হলো:
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসমূহ:
- পরিচয়পত্র: জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্ট
- ঠিকানার প্রমাণপত্র: ভাড়ার চুক্তিপত্র, বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানি বিল ইত্যাদি
- ব্যবসার পরিকল্পনা: ব্যবসার প্রকৃতি, উদ্দেশ্য, বাজার বিশ্লেষণ ও প্রস্তাবিত বিনিয়োগের বিস্তারিত বিবরণ
- আয়কর রিটার্ন: বিশেষত গত তিন বছরের আয়কর রিটার্নের কপি
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট: ব্যাংক হিসাবের সাম্প্রতিক বিবরণী
- ব্যবসার লাইসেন্স: ব্যবসার জন্য প্রযোজ্য লাইসেন্সের কপি (যদি প্রয়োজন হয়)
- ব্যবসার প্রস্তাবনা: ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এবং এর ব্যবহারের পরিকল্পনা
- কর্মচারী তালিকা: যদি কর্মচারী থাকে, তাদের তালিকা ও বেতন কাঠামো
ইসলামী ব্যাংক ফ্রিল্যান্সিং লোন
বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণদের কাছে ফ্রিল্যান্সিং একটি জনপ্রিয় ও সম্ভাবনাময় পেশা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। হাজার হাজার তরুণ প্রতিমাসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তরুণদের এই সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারে উৎসাহ দিতে এবং প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দিতে ইসলামী ব্যাংক "ফ্রিল্যান্সিং ইনভেস্টমেন্ট" বা লোন প্রদান করছে।
এই লোনের মাধ্যমে আপনি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ গ্রহণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক ডিভাইস (যেমন ল্যাপটপ, প্রিন্টার, গ্রাফিক্স ট্যাব ইত্যাদি) ক্রয় করতে পারবেন। তবে এই লোন সর্বোচ্চ ২ বছরের মধ্যে পরিশোধ করার নিয়ম রয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিং লোন গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:
- পরিচয়পত্র: জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট
- ঠিকানার প্রমাণ: বাড়ি ভাড়া চুক্তিপত্র, ইউটিলিটি বিল (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদি)
- আয়কর রিটার্ন: বিশেষ করে পূর্ববর্তী তিন বছরের আয়কর রিটার্ন, যদি থাকে
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট: সাম্প্রতিক ব্যাংক হিসাব বিবরণী
- ট্রেনিং প্রমাণপত্র: আপনি যদি আগে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত কোনো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকেন, তার সনদ
- পেশাগত পরিকল্পনা: আপনি কী ধরনের ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে চান এবং এর জন্য কী কী সরঞ্জাম প্রয়োজন তা বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করতে হবে
- ইনভয়েস ও ডকুমেন্টেশন: যে ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেটগুলো কেনার পরিকল্পনা রয়েছে, সেগুলোর সম্ভাব্য খরচ এবং ইনভয়েস
এই ডকুমেন্টগুলো প্রস্তুত থাকলে আপনি খুব সহজেই ইসলামী ব্যাংক থেকে ফ্রিল্যান্সিং ইনভেস্টমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন এবং আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারকে একটি পেশাদার পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবেন।
ইসলামী ব্যাংক শিল্পখাত উন্নয়ন লোন
নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং বাংলাদেশের শিল্প খাতের টেকসই উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংক এসএমই (SME) ইনভেস্টমেন্ট সুবিধা প্রদান করে থাকে। একটি দেশের শিল্প খাত যত উন্নত, সেই দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি ততই শক্তিশালী হয়। শিল্প খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, পণ্য উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়।
ইসলামী ব্যাংক থেকে শিল্প খাতে এসএমই লোন (ইনভেস্টমেন্ট) গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:
- ব্যবসার বৈধ ট্রেড লাইসেন্স
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট
- ব্যবসা পরিচালনার স্থান সংক্রান্ত দলিল (যদি প্রযোজ্য হয়)
এই ডকুমেন্টগুলো প্রস্তুত থাকলে, আপনি সহজেই ইসলামী ব্যাংকের এসএমই ইনভেস্টমেন্ট সুবিধা গ্রহণ করে শিল্প খাতে আপনার উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে পারবেন।
ইসলামী ব্যাংক রিয়েল এস্টেট ব্যবসার লোন
রিয়েল এস্টেট ব্যবসার জন্য ইসলামী ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট সুবিধা
বর্তমান বাংলাদেশের অন্যতম লাভজনক ও জনপ্রিয় খাত হলো রিয়েল এস্টেট ব্যবসা। জমি, ফ্ল্যাট বা বাণিজ্যিক স্থাপনা ক্রয়-বিক্রয় ও উন্নয়নের মাধ্যমে যারা আয় করতে চান, তাদের জন্য এই খাত একটি বড় সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়। আপনি যদি এই খাতে ব্যবসা শুরু করতে চান, তবে ইসলামী ব্যাংক হতে শরিয়াহ্-সম্মত পদ্ধতিতে ইনভেস্টমেন্ট নিতে পারেন।
রিয়েল এস্টেট ব্যবসার আওতায় পড়ে:
- আবাসিক প্রকল্প উন্নয়ন
- বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ
- জমি ক্রয় ও বিক্রয়
- ভাড়ার জন্য ভবন নির্মাণ বা সংস্কার
এই খাতে বিনিয়োগ শুরু করতে হলে আপনাকে আগে বাজার বিশ্লেষণ, প্রকল্প পরিকল্পনা এবং অর্থায়ন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে।
ইসলামী ব্যাংকের রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট আপনাকে এই খাতে নতুন প্রকল্প শুরু করতে বা বিদ্যমান প্রকল্প সম্প্রসারণে সহায়তা করতে পারে। নিচে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস উল্লেখ করা হলো—
রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:
- পরিচয়পত্র: বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট
- ঠিকানার প্রমাণ: বিদ্যুৎ, পানি বা গ্যাস বিল, অথবা বাড়িভাড়া চুক্তিপত্র
- ব্যবসায়িক পরিকল্পনা: প্রকল্পের ধরন, লক্ষ্য, বাজেট, বাজার বিশ্লেষণ ও আয়-ব্যয়ের প্রক্ষেপণ
- আয়কর রিটার্ন: অন্তত গত তিন বছরের আয়কর রিটার্ন বা বিকল্প আয় প্রমাণ
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট: আপনার ব্যাংক হিসাবের সাম্প্রতিক বিবরণ
- সম্পত্তির দলিল ও কাগজপত্র: যেই সম্পত্তির উপর কাজ হবে তার মালিকানা প্রমাণ ও খতিয়ান
- প্রকল্প ব্যয়ের বিবরণ: প্রাথমিক নির্মাণ/উন্নয়ন সামগ্রীর তালিকা ও খরচের হিসাব
এই ডকুমেন্টগুলো প্রস্তুত থাকলে, আপনি সহজেই ইসলামী ব্যাংক থেকে রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ (ইনভেস্টমেন্ট) গ্রহণ করতে পারবেন। এতে আপনার প্রকল্প পরিচালনা আরও সুশৃঙ্খল ও সফল হবে—শরিয়াহ্ অনুসরণ করেই।
ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত
ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের গাইডলাইন (চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের জন্য)
বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যক্তিগত কিংবা পেশাগত প্রয়োজনে ব্যাংক ঋণের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। ইসলামী ব্যাংক শরিয়াহ্ ভিত্তিক নিয়ম অনুসরণ করে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে ইনভেস্টমেন্ট সুবিধা দিয়ে থাকে। নিচে বিভিন্ন পেশার মানুষের জন্য ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার শর্তাবলী ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস তুলে ধরা হলো।
চাকরিজীবীদের জন্য শর্তাবলী:
- সরকারি বা বেসরকারি চাকরিজীবী হলে, অন্তত একটানা এক বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
- যদি বাড়ি ভাড়া থেকে আয় করেন, সেই আয় সংক্রান্ত প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
- যাদের বেতন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়, তাদের সর্বশেষ ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে।
- যারা ক্যাশে বেতন পান, তাদের ক্ষেত্রে ব্যাংক আয়ের ভেরিফিকেশন আলাদাভাবে সম্পন্ন করে।
পেশাজীবীদের জন্য (ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, স্থপতি):
- কোনো একই প্রতিষ্ঠানে একটানা অন্তত ১ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
- দুই বা ততোধিক প্রতিষ্ঠানে ভাগ করে কাজের অভিজ্ঞতা গণ্য হবে না।
ব্যবসায়ীদের জন্য শর্তাবলী:
- ব্যবসার বয়স অন্তত ১ বছর হতে হবে।
- জমা দিতে হবে:
- সর্বশেষ ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- কার্যকর ট্রেড লাইসেন্স
- টিআইএন সার্টিফিকেট
গ্যারান্টর সংক্রান্ত শর্ত:
- কমপক্ষে ২ জন গ্যারান্টর থাকতে হবে।
- গ্যারান্টর হিসেবে হতে পারেন: পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয় বা বিশ্বস্ত পরিচিত কেউ।
- গ্যারান্টরের আর্থিক সামর্থ্য যাচাই করা হবে, তাই তাদের সচ্ছলতা থাকা আবশ্যক।
আরো পড়ুন: পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম
হোম লোনের জন্য প্রয়োজনীয়তা:
জমির মালিকানা:
- নিজস্ব মালিকানাধীন জমি থাকা আবশ্যক। পিতার নামে জমি হলেও চলবে।
- জমির মূল দলিল জমা দিতে হবে (সার্টিফাইড কপি গ্রহণযোগ্য নয়)।
প্রাইভেট প্লটের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- জমির মূল মালিকানা দলিল ও বায়া দলিল
- C.S, S.A, R.S ও B.S খতিয়ানের জাবেদা নকল
- DCR, খাজনার রশিদ এবং নামজারি খতিয়ান
- জেলা বা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ইস্যুকৃত ১২ বছরের এনইসি সনদ
সরকারি প্লটের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- বরাদ্দপত্র ও দখল হস্তান্তর পত্র
- মূল লীজ দলিল ও প্রয়োজনে বায়া দলিল
- লীজ দাতা প্রতিষ্ঠানের বন্ধক অনুমতিপত্র
- হস্তান্তরের ক্ষেত্রে: মালিকানা দলিল, নামজারি, ডিসিআর ও খাজনা রশিদ
ইসলামী ব্যাংকের মুনাফার হার (Loan Profit Rate):
ইসলামী ব্যাংকে মুনাফা নির্ধারিত হয় লোনের ধরন, পরিমাণ এবং সময়কাল অনুযায়ী। সাধারণত মুনাফা হার নিচের মতো হয়ে থাকে:
লোনের ধরন | মুনাফা হার (প্রায়) |
---|---|
গ্রাহক ঋণ | ৯% – ১৫% |
SME ঋণ | ১০% – ১৬% |
হাউজিং ঋণ | ১১% – ১৭% |
কৃষি ঋণ | ৯% – ১৪% |
অটো ঋণ | ১২% – ১৮% |
শেষ কথা
ইসলামী ব্যাংক শরিয়াহ্-সম্মত নিয়মনীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করে ঋণ প্রদান করে। তাই লোন নেওয়ার আগে অবশ্যই ব্যাংকের সকল শর্ত, কাগজপত্র এবং মুনাফার হার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া জরুরি।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে Google Pay চালু হলে কী পরিবর্তন আসবে?
সঠিক তথ্য ও প্রস্তুতির মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই ইসলামী ব্যাংক থেকে আপনার প্রয়োজনীয় লোন গ্রহণ করতে পারবেন এবং নিজের লক্ষ্য পূরণে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবেন।