BRTA ড্রাইভিং লাইসেন্স একাউন্ট খোলার গাইড

আজকের এই পোস্টে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব কিভাবে BRTA ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে একাউন্ট খুলতে হয়। এখন সময়ের পরিবর্তনে কেউই অফিসে গিয়ে জটিলতা পছন্দ করে না, তাই অধিকাংশ কাজই অনলাইনের মাধ্যমে সহজেই সম্পন্ন করা হয়। ধাপে ধাপে আমরা জানব কিভাবে ঘরে বসেই BRTA ড্রাইভিং লাইসেন্স একাউন্ট খোলার পুরো প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।



BRTA ড্রাইভিং লাইসেন্স একাউন্ট খোলার গাইড




যদি আপনি গাড়ি চালাতে চান, তাহলে প্রথমে আপনাকে গাড়ি চালানো শিখতে হবে। তবে তার আগে অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে। আপনি চাইলে সরাসরি BRTA অফিসে গিয়ে আবেদন করতে পারেন অথবা অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন। আজকের পোস্টে আমরা জানবো কিভাবে অনলাইনে BRTA ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য একাউন্ট খুলে আবেদন করতে হয়, সেই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া।


BRTA ড্রাইভিং লাইসেন্স একাউন্ট খোলার গাইড 


চলুন, আজকে BRTA ড্রাইভিং লাইসেন্স একাউন্ট খোলার সম্পূর্ণ গাইড ধাপে ধাপে দেখে নিই।


আপনি যদি গাড়ি কিনতে চান, তাহলে অবশ্যই আগে গাড়ি চালানো শিখতে হবে। কিন্তু শুধু গাড়ি চালানো শিখলেই হবে না, রাস্তায় নিরাপদে ও নিয়ম অনুযায়ী গাড়ি চালানোর জন্য ট্রাফিক আইন-নিয়মগুলো জানা জরুরি। ধরুন, আপনি গাড়ি কিনলেন এবং আত্মীয়ের সাহায্যে গাড়ি চালানো শিখলেন, কিন্তু ট্রাফিক নিয়ম কানুন না জানায় আপনি হয়ত অজান্তেই আইন ভঙ্গ করে ফেলবেন। যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স না নিয়ে গাড়ি চালান, তাহলে সেটা আইন বিরুদ্ধ এবং এর ফলে আপনি বিভিন্ন ভোগান্তির মুখোমুখি হতে পারেন।


সেজন্য নিরাপদ থাকার জন্য এবং আইনি ঝামেলা এড়িয়ে চলার জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার আগে আপনাকে অবশ্যই কিছু সময় ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা পাস করতে হবে। এরপরই আপনি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আপনার ড্রাইভিং দক্ষতা যাচাই-বাছাই হয়ে সবকিছু ঠিক থাকলে আপনাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হবে।


আজকে আমরা জানবো কিভাবে আপনি সহজেই ঘরে বসে অথবা মোবাইল ফোন কিংবা কম্পিউটার ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে BRTA ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।


প্রথমে আপনার গুগল ব্রাউজার ওপেন করুন। তারপর সার্চ বারে টাইপ করুন bsp.brta.gov.bd এবং ওয়েবসাইটটি খুলুন। ওপেন করার পর প্রথমেই যে লিংকটি দেখতে পাবেন, সেটিতে ক্লিক করুন। সেখানে অনেক অপশন দেখা যাবে। যেহেতু আপনি নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে যাচ্ছেন, তাই “নিবন্ধন” অপশনে ক্লিক করুন।




এরপর একটি নতুন পেজ খুলবে, যেখানে আপনাকে কিছু তথ্য পূরণ করতে বলা হবে। আপনার এনআইডি অনুযায়ী জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর এবং এনআইডি নম্বর সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। এখানে মোবাইল নম্বর অবশ্যই সেই নম্বর হতে হবে যা আপনার এনআইডিতে নিবন্ধিত আছে।


তথ্য পূরণের পর "অনুসন্ধান" বাটনে ক্লিক করুন। এর সঙ্গে আপনার মোবাইলে একটি ৩ ডিজিটের ওটিপি (OTP) পাঠানো হবে। এই ওটিপিটি সঠিকভাবে বসিয়ে "যাচাই করুন" বাটনে ক্লিক করতে হবে।


ওটিপি ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হলো, আপনার দেওয়া মোবাইল নম্বরটি আপনার এনআইডিতে নিবন্ধিত নম্বরের সাথে মিল আছে কিনা তা যাচাই করা।




মোবাইল নম্বর সঠিকভাবে যাচাই হলে স্ক্রিনে দেখাবে — "your mobile no successfully verified"। এর পর জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী আপনার সকল সঠিক তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে, যেমন: গ্রাহকের নাম, জন্ম তারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং মোবাইল নম্বর।


সেখানেই একটি Gmail বা ইমেইল অ্যাড্রেস দেওয়ার ক্ষেত্র থাকবে, সেটি সঠিকভাবে পূরণ করুন।


তারপর আপনার অনলাইন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য একটি পাসওয়ার্ড নির্ধারণ করার অপশন আসবে। সেখানে একটি শক্ত পাসওয়ার্ড বসিয়ে, সেটি নিশ্চিত করুন।


সবশেষে "নিবন্ধন করুন" বাটনে ক্লিক করুন। এরপর পরবর্তী ধাপ বা পেজ খুলে যাবে।



এখানে আপনি দেখতে পাবেন একটি ইংরেজি বার্তা, যেখানে জানানো হবে যে আপনার একাউন্ট সফলভাবে তৈরি হয়েছে। এরপর আপনার দেওয়া ইমেইল অ্যাড্রেসে একটি ভেরিফিকেশন মেইল পাঠানো হবে। সেই মেইলে থাকা লিংকে ক্লিক করে আপনি যাচাই করতে পারবেন আপনার ইমেইলটি সঠিকভাবে দেওয়া হয়েছে কিনা।


যখন ইমেইল যাচাই সম্পন্ন হবে, তখন আপনি আপনার দেওয়া মোবাইল নম্বর বা ইমেইল অ্যাড্রেসটিকে ইউজারনেম হিসেবে ব্যবহার করে এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে "লগইন" অপশনে ক্লিক করুন। যদি সবকিছু সঠিক হয়, তাহলে আপনি সহজেই আপনার একাউন্টে প্রবেশ করতে পারবেন।



শেষ ধাপে এসে আপনাকে একটি নতুন প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। উপরের মেনুবারে থাকা "প্রোফাইল" অপশনে ক্লিক করুন। এরপর একটি নতুন পেজ ওপেন হবে।


এই পেজে ইউজারনেমের পাশে থাকা "রিফ্রেশ" বাটনে ক্লিক করলে আপনি একটি বার্তা দেখতে পাবেন—
"YOUR PROFILE VERIFIED BY NID SERVER"

এটি দেখালে বুঝবেন যে আপনার তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভারের মাধ্যমে সফলভাবে যাচাই হয়েছে। এরপর "OK" বাটনে ক্লিক করুন।


এবার আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী সকল তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফর্মে চলে আসবে। যদি সব তথ্য সঠিক থাকে, তাহলে পেজের নিচের দিকে গিয়ে "প্রোফাইল হালনাগাদ" (Update Profile) বাটনে ক্লিক করুন।


এইভাবে আপনি আপনার BRTA ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রোফাইল তৈরি সম্পন্ন করতে পারবেন।




BRTA ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য যে তথ্য সম্পর্কে জানতে হবে 


BRTA হলো বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন খাত এবং সড়ক নিরাপত্তায় শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একটি সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর পূর্ণরূপ হলো Bangladesh Road Transport Authority, যার বাংলা অর্থ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ


BRTA দেশের সকল ধরনের মোটরযান ও যানবাহনের নিবন্ধন, ফিটনেস, রুট পারমিট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যুর দায়িত্বে নিয়োজিত। অর্থাৎ, আপনি বাংলাদেশে গাড়ি চালানোর জন্য যে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়, তা প্রদান করে এই প্রতিষ্ঠানটি।


আরো পড়ুন: ডলার রিসিভ করার জন্য Payoneer অ্যাকাউন্ট কিভাবে খুলব


বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত প্রায় সব কাজই অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব। এ লক্ষ্যেই BRTA চালু করেছে একটি বিশেষ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যার নাম BSP পোর্টাল (BRTA Service Portal)। এই পোর্টালের মাধ্যমেই ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম খুব সহজে ঘরে বসেই করা যায়।


আমরা আগেই জেনেছি BSP পোর্টালের মাধ্যমে কীভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়। তবে আবেদন করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম ও শর্ত সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।


চলুন, এবার জেনে নিই ড্রাইভিং লাইসেন্স করার আগে যেসব নিয়ম অবশ্যই জানা দরকার।


ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ করা আবশ্যক।


প্রথমত, আবেদনকারীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে অষ্টম শ্রেণি (৮ম শ্রেণি) উত্তীর্ণ। অর্থাৎ আপনি যদি অষ্টম শ্রেণি পাশ করে থাকেন, তবেই আপনি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।


দ্বিতীয়ত, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা বাধ্যতামূলক। গাড়ি চালানোর সময় মনোযোগ, উপস্থিত বুদ্ধি এবং সজাগতা প্রয়োজন, তাই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকাটাও অত্যন্ত জরুরি।


তৃতীয়ত, বয়সসীমা অনুসারে দুই ধরনের লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় বয়স ভিন্ন:


  • অপেশাদার (Non-Professional) লাইসেন্স পেতে হলে ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৮ বছর
  • পেশাদার (Professional) লাইসেন্স এর জন্য ন্যূনতম বয়স হতে হবে ২১ বছর

সুতরাং, আবেদন করার আগে আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে আপনি পেশাদার নাকি অপেশাদার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে চান। আপনার বয়স এবং তথ্য যদি উল্লিখিত শর্ত অনুযায়ী না হয়, তাহলে আপনি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।


এই নিয়মগুলো ঠিকভাবে মেনে চললে আপনি সহজেই লাইসেন্সের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন এবং আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন।

লার্নার বা শিক্ষানবীস লাইসেন্স করার নিয়ম এবং প্রয়োজনীয় কাগজ


বাংলাদেশের মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এর ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে—কোনো ব্যক্তি বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া রাস্তায় কোনো প্রকার গাড়ি চালাতে পারবেন না।
ধরুন আপনি নিজের চেষ্টায় বা কাউকে দিয়ে গাড়ি চালানো শিখে ফেলেছেন, তবুও লাইসেন্স ছাড়া রাস্তায় গাড়ি চালানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

বিশ্বের যেকোনো দেশে—বাংলাদেশ হোক বা বিদেশ—বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। কারণ ড্রাইভিং লাইসেন্স শুধু একজন চালকের দক্ষতার প্রমাণ নয়, এটি পথচারী ও চালক উভয়ের নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও দেয়।

তাই বৈধ লাইসেন্স পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই ধাপে ধাপে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপ হলো: লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স (শিক্ষানবীস লাইসেন্স) গ্রহণ।

🛣️ লার্নার বা শিক্ষানবীস ড্রাইভিং লাইসেন্স কী এবং কেন প্রয়োজন?

লাইসেন্স পেতে হলে প্রথমে আপনাকে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে। এটি একটি অস্থায়ী লাইসেন্স যা আপনাকে গাড়ি চালানো শিখতে এবং প্রশিক্ষণ নিতে সহায়তা করে।

এই লাইসেন্সটি অনলাইনে খুব সহজেই করা যায়। আবেদন করতে হলে নির্ধারিত কাগজপত্র সহ একটি অনলাইন ফর্ম পূরণ করতে হবে।

🌐 অনলাইনে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন পদ্ধতি:

প্রথমে আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারে bsp.brta.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।

সেখানে আবেদন ফর্ম পূরণ করুন এবং প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র আপলোড করুন।

আবেদন সফলভাবে জমা হলে, আপনার লার্নার লাইসেন্স অনলাইনে ইস্যু করা হবে।

আপনি চাইলে সেটি অনলাইন থেকে প্রিন্ট করে নিতে পারেন।

🩺 মেডিকেল সার্টিফিকেট কেন লাগবে?


যেহেতু ড্রাইভিংয়ের জন্য শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা প্রয়োজন, তাই আপনাকে একজন রেজিস্টার্ড ডাক্তার থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট নিতে হবে।
এই সার্টিফিকেট প্রমাণ করবে যে আপনি ড্রাইভিংয়ের জন্য উপযুক্ত।

📝 আবেদন করার পর যা যা করতে হবে:


অনলাইনে ফর্ম জমা দেওয়ার পর আপনাকে নির্ধারিত তারিখে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে।

এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে পরবর্তীতে ব্যবহারিক (প্র্যাকটিক্যাল) পরীক্ষা নেওয়া হবে।

সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আপনি পাবেন চূড়ান্ত ড্রাইভিং লাইসেন্স।

💰 ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি:

অপেশাদার লাইসেন্সের ফি: ৩৪৫ টাকা

পেশাদার লাইসেন্সের ফি: ৫১৮ টাকা
(ফি অনলাইনে জমা দিতে হবে)

📄 আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণ

পাসপোর্ট সাইজ ছবি (৩০০×৩০০ পিক্সেল, সর্বোচ্চ ১৫০KB)

রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট

জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০KB)

ইউটিলিটি বিলের স্ক্যান কপি (বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ)

ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাশের সনদের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০KB)

আবেদন ফি পরিশোধের রসিদ

বাংলা ও ইংরেজিতে নির্ভুলভাবে সব তথ্য পূরণ করা

Previous Post Next Post