ডলার রিসিভ করার জন্য Payoneer অ্যাকাউন্ট কিভাবে খুলব

পেওনিয়ার (Payoneer) হলো একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা অনলাইনে অর্থ লেনদেন এবং আন্তর্জাতিক ডিজিটাল পেমেন্ট পরিষেবা প্রদান করে থাকে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সার, অনলাইন ব্যবসায়ী ও আন্তর্জাতিক লেনদেনকারীরা সহজে ডলার বা বিদেশি মুদ্রা গ্রহণের জন্য এই সেবা ব্যবহার করে থাকেন।


ডলার রিসিভ করতে চাইলে Payoneer অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতিতে যাওয়ার আগে চলুন আগে জেনে নিই—পেওনিয়ার (Payoneer) আসলে কী এবং কেন এটি ব্যবহৃত হয়।


এটিকে এক ধরনের আন্তর্জাতিক ব্যাংক হিসেবে ভাবা যেতে পারে, যা মূলত ফ্রিল্যান্সার, ব্যবসায়ী ও অনলাইন বিক্রেতাদের জন্য সীমান্ত-পার পেমেন্ট বা ক্রস-বর্ডার লেনদেনের সুবিধা দেয়। পেওনিয়ার এমন একটি ডিজিটাল সেতু হিসেবে কাজ করে, যা বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষকে—হোক সে ব্যবসায়ী, ফ্রিল্যান্সার কিংবা ই-কমার্স বিক্রেতা—একে অপরের সঙ্গে সহজে আর্থিক লেনদেন করতে সহায়তা করে।

ডলার রিসিভ করার জন্য Payoneer অ্যাকাউন্ট এর প্রয়োজনীয়তা


ডলার (USD) গ্রহণের জন্য Payoneer অ্যাকাউন্টের প্রয়োজনীয়তা মূলত আন্তর্জাতিক লেনদেনকে সহজ করা এবং অতিরিক্ত খরচ কমানোর জন্য। চলুন দেখি—বাংলাদেশে বসে কিংবা বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে ডলার রিসিভ করতে Payoneer কেন এতটা গুরুত্বপূর্ণ।

🔹 আমেরিকান লোকাল ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সুবিধা

সাধারণভাবে, আমেরিকা থেকে ডলার সরাসরি বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাতে গেলে তা আন্তর্জাতিক ওয়্যার ট্রান্সফার (Wire Transfer) হিসেবে প্রক্রিয়া হয়। এই পদ্ধতিতে খরচ অনেক বেশি এবং পেমেন্ট পেতে সময়ও বেশি লাগে

অন্যদিকে, বেশিরভাগ আমেরিকান ক্লায়েন্ট পছন্দ করেন লোকাল ব্যাংক ট্রান্সফার (যেমনঃ ACH), কারণ এতে ফি কম এবং লেনদেন খুব দ্রুত সম্পন্ন হয়।

Payoneer আপনাকে একটি ভার্চুয়াল USD রিসিভিং অ্যাকাউন্ট সরবরাহ করে, যেখানে একটি US ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও রাউটিং নম্বর দেওয়া হয়। ফলে, আপনার ক্লায়েন্টরা মনে করবেন তারা একটি লোকাল আমেরিকান ব্যাংকে টাকা পাঠাচ্ছেন। এতে তাদের জন্য পেমেন্ট পাঠানো সহজ হয় এবং আপনি দ্রুত ডলার রিসিভ করতে পারেন।


🔹 তাৎক্ষণিক ও ফি-মুক্ত লেনদেন (Payoneer to Payoneer)

যদি আপনার ক্লায়েন্টেরও Payoneer অ্যাকাউন্ট থাকে, তাহলে তারা সরাসরি ফি ছাড়াই আপনাকে ডলার পাঠাতে পারবেন এবং এই ট্রান্সফার প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে আপনার অ্যাকাউন্টে পৌঁছায়।

এটি সময় এবং খরচ—উভয়ই বাঁচায়, যা বিশেষ করে আন্তর্জাতিক লেনদেনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

আর যদি ক্লায়েন্টের Payoneer অ্যাকাউন্ট না-ও থাকে, তবুও তারা আপনার Payoneer-এর USD Receiving Account-এ সহজেই পেমেন্ট পাঠাতে পারবেন, যা টRADITIONAL ব্যাংকিং চ্যানেলের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী ও ঝামেলাহীন।


🔹 মুদ্রা রূপান্তরের নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে

Payoneer-এর মাধ্যমে আপনি ডলার গ্রহণ করার পর তা সরাসরি রূপান্তর না করেও নিজের অ্যাকাউন্টে ধরে রাখতে পারেন। যখন বাজার রেট ভালো থাকে, তখন আপনি নিজের পছন্দমতো সময়ে ডলারকে BDT-তে রূপান্তর করে স্থানীয় ব্যাংক বা বিকাশে তুলতে পারবেন।

এটি আপনাকে দেয়:

  • মুদ্রা বিনিময়ে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ
  • সেরা এক্সচেঞ্জ রেট পাওয়ার সুযোগ
  • ব্যাংকের ফিক্সড রেটের ক্ষতি এড়িয়ে চলার স্বাধীনতা

🔹 আন্তর্জাতিক লেনদেনের জটিলতা থেকে মুক্তি

প্রথাগত আন্তর্জাতিক ট্রান্সফারে SWIFT Code, IBAN, Intermediary Bank Info ইত্যাদি অনেক জটিল বিবরণ দিতে হয়, যেখানে ছোট ভুলেও বড় সমস্যা হতে পারে।

কিন্তু Payoneer ব্যবহার করলে আপনি শুধু US লোকাল ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ডিটেইলস দিলেই পেমেন্ট রিসিভ করতে পারেন। এতে পেমেন্ট প্রক্রিয়াটি হয়:

  • অনেক সহজ
  • ঝুঁকিমুক্ত
  • এবং দ্রুত সম্পন্নযোগ্য

সবমিলিয়ে, Payoneer শুধু একটি পেমেন্ট গেটওয়ে নয়, বরং একটি নিরাপদ, দ্রুত এবং খরচ-সাশ্রয়ী প্ল্যাটফর্ম, যা আন্তর্জাতিক লেনদেনকে আপনার জন্য অনেক সহজ করে তোলে।

Payoneer সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনাঃ সহজ ভাষায় পেওনিয়ার


Payoneer একটি আন্তর্জাতিক ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যাটফর্ম, যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অনলাইন পেমেন্ট এবং অর্থ লেনদেনকে সহজ ও কার্যকর করা। এটি প্রথাগত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে ব্যবহারকারীদের জন্য ভার্চুয়াল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, প্রিপেইড Mastercard, এবং দ্রুত আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গ্রহণ ও পাঠানোর সুবিধা প্রদান করে।

এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে, একজন ফ্রিল্যান্সার খুব সহজেই যুক্তরাষ্ট্রের ক্লায়েন্ট থেকে ডলার গ্রহণ করতে পারেন, আবার কোনো ই-কমার্স ব্যবসাও ইউরোপের গ্রাহকদের কাছ থেকে ইউরোতে পেমেন্ট সংগ্রহ করতে পারে—সবই এক প্ল্যাটফর্মে, নিরাপদ ও সাশ্রয়ীভাবে।


সহজভাবে বললে, পেওনিয়ার (Payoneer) হলো একটা আন্তর্জাতিক ব্যাংকের মতো একটি অ্যাকাউন্ট, যদিও এটা আসল ব্যাংক নয়। ধরুন, আপনি বাংলাদেশে আছেন আর আপনার একজন ক্লায়েন্ট আছে আমেরিকায়। কিন্তু তারা সরাসরি আপনার বাংলাদেশি ব্যাংকে টাকা পাঠাতে পারেন না বা পাঠালে অনেক বেশি ফি দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে পেওনিয়ার সাহায্য করে।


পেওনিয়ার আপনাকে একটি বিশেষ অ্যাকাউন্ট দেয়, যা দেখতে আমেরিকার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতো (বা ইউরোপ বা অন্য কোনো দেশেরও হতে পারে)। যখন আপনার আমেরিকান ক্লায়েন্ট আপনাকে টাকা পাঠায়, তারা ওই আমেরিকান ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠায়, যেমন তারা তাদের নিজের দেশের কাউকে টাকা পাঠাচ্ছে। সেই টাকা আপনার পেওনিয়ার অ্যাকাউন্টে জমা হয়। পরে আপনি চাইলে সেই টাকা আপনার পেওনিয়ার থেকে নিজের বাংলাদেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সহজেই নিতে পারেন।


একদম সহজ ভাষায় বললে, পেওনিয়ার হলো আপনার জন্য একটি অনলাইন মানিব্যাগ (ওয়ালেট), যার মাধ্যমে আপনি বিদেশ থেকে টাকা পেতে পারেন এবং নিজের পছন্দমতো টাকা পাঠাতেও পারেন। বিশেষ করে যারা অনলাইনে কাজ করেন—যেমন ফ্রিল্যান্সার বা ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা—তাদের জন্য এটা খুবই কাজে লাগে। কারণ বিদেশি ক্লায়েন্ট বা কোম্পানি থেকে টাকা নেওয়ার সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ মাধ্যমগুলোর মধ্যে একটি পেওনিয়ার।


এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক লেনদেনকে অনেক সহজ করে দেয়, ঠিক যেমন আমরা এক শহর থেকে আরেক শহরে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাই, পেওনিয়ারও বিশ্বব্যাপী একই কাজ করে।

পেওনিয়ার কিভাবে কাজ করেঃ কার্যপদ্ধতি


পেওনিয়ার মূলত আপনাকে বিভিন্ন দেশের মুদ্রায় লেনদেন করার জন্য ভার্চুয়াল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়। এর মাধ্যমে আপনিঃ

আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গ্রহণ:
বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ক্লায়েন্ট বা জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস (যেমন Fiverr, Upwork, Amazon, Google ইত্যাদি) থেকে সরাসরি আপনার Payoneer অ্যাকাউন্টে টাকা গ্রহণ করতে পারবেন।


ভার্চুয়াল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট:
পেওনিয়ার আপনাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং চীনসহ বিভিন্ন দেশে লোকাল ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতো করে পেমেন্ট গ্রহণের সুবিধা দেয়।


পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড:
আপনি একটি ফিজিক্যাল অথবা ভার্চুয়াল পেওনিয়ার মাস্টারকার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন, যা বিশ্বব্যাপী অনলাইন কেনাকাটা, দোকানে পেমেন্ট এবং এটিএম থেকে নগদ উত্তোলনের জন্য ব্যবহার করা যায়।


সহজ অর্থ স্থানান্তর:
Payoneer থেকে অন্য Payoneer অ্যাকাউন্টে বিনামূল্যে টাকা পাঠানো যায়। পাশাপাশি, আপনার Payoneer অ্যাকাউন্ট থেকে সহজেই স্থানীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে পারবেন।


ডলার রিসিভ করার জন্য Payoneer অ্যাকাউন্ট কিভাবে খুলব


আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গ্রহণ ও প্রেরণের জন্য পেওনিয়ার একটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। নিচে ধাপে ধাপে নতুন পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খুলার প্রক্রিয়া সহজ ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে।

১। পেওনিয়ার ওয়েবসাইটে প্রবেশ:
প্রথমে আপনার ওয়েব ব্রাউজারে পেওনিয়ারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.payoneer.com লিখে প্রবেশ করুন। ওয়েবসাইটের হোমপেজে পৌঁছে, উপরের ডানদিকে থাকা "Sign Up" বা "Register" বোতামে ক্লিক করুন।



২। আপনার ব্যবহারের উদ্দেশ্য নির্বাচন:
পেওনিয়ারে সাইন আপ করার সময় আপনাকে আপনার ব্যবহারের উদ্দেশ্য নির্বাচন করতে হবে।

"I am a" অপশন থেকে "Freelancer or Online Professional" নির্বাচন করুন, কারণ এটি ফ্রিল্যান্সার ও অনলাইন পেশাদারদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।

এরপর "I want to" অপশন থেকে "Get paid by international clients or marketplaces" বেছে নিন।
  • এতে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক অ্যাকাউন্ট খুলছেন।
  • সবকিছু ঠিক থাকলে, "Register" বোতামে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।



৩। প্রাথমিক ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ:
"Getting Started" সেকশনে আপনার মৌলিক ব্যক্তিগত তথ্য সাবধানে পূরণ করুন:

  • আপনার পুরো নাম (প্রথম নাম ও শেষ নাম)
  • আপনার সক্রিয় ইমেইল ঠিকানা, যা অ্যাকাউন্টের যোগাযোগের জন্য ব্যবহার হবে
  • আপনার জন্ম তারিখ

এই তথ্যগুলো অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা পাসপোর্টের সাথে সঠিকভাবে মিলতে হবে। ভুল তথ্য দিলে পরবর্তী ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় সমস্যা হতে পারে। তথ্য পূরণ করার পর "Next" বাটনে ক্লিক করুন।


৪। যোগাযোগ বিষয়ক তথ্য প্রদান:
"Contact Details" সেকশনে আপনার বর্তমান ঠিকানা এবং যোগাযোগের তথ্য দিন:

  • আপনার বর্তমান ঠিকানা
  • শহর এবং পোস্টাল কোড
  • একটি সক্রিয় মোবাইল নম্বর, যেখানে যাচাইকরণের জন্য একটি কোড পাঠানো হবে। কোডটি প্রাপ্ত হওয়ার পর নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশ করে মোবাইল নম্বর যাচাই করুন।

সব তথ্য সঠিকভাবে দেওয়ার পর "Next" বোতামে ক্লিক করুন।


৫। নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য নির্ধারণ:
"Security Details" সেকশনে আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় তথ্য দিন:

  • একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করুন, যা অক্ষর, সংখ্যা ও বিশেষ চিহ্নের সমন্বয়ে গঠিত। পাসওয়ার্ডটি আবার প্রবেশ করিয়ে নিশ্চিত করুন।

  • একটি সিকিউরিটি প্রশ্ন নির্বাচন করে তার উত্তর দিন। এটি আপনার পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে বা অ্যাকাউন্টে সমস্যা হলে পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে।

  • আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা পাসপোর্ট নম্বর প্রদান করুন, যা আপনার অন্যান্য তথ্যের সাথে মিলিয়ে যাচাই করা হবে।

সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে "Next" বোতামে ক্লিক করুন।


৬। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংযুক্তকরণ:
"Almost Done" সেকশনে আপনার স্থানীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যোগ করুন, যেখানে আপনি পেওনিয়ার থেকে অর্থ উত্তোলন করবেন:

  • "Personal" অ্যাকাউন্ট টাইপ নির্বাচন করুন (যদি ব্যক্তিগত ব্যবহার হয়)।
  • ব্যাংকের দেশ হিসেবে "Bangladesh" নির্বাচন করুন।
  • মুদ্রা হিসেবে "BDT" (বাংলাদেশী টাকা) বাছাই করুন।
  • আপনার ব্যাংকের নাম (যেমন: One Bank, Islami Bank, Dutch-Bangla Bank), অ্যাকাউন্টের নাম, অ্যাকাউন্টের ধরন (Savings/Current) এবং সঠিক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিন।
  • ব্যাংকের SWIFT/BIC কোড দিন। যদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে না আসে, তবে আপনার ব্যাংকের ওয়েবসাইট বা গুগল থেকে কোডটি সংগ্রহ করুন।
  • পেওনিয়ারের শর্তাবলী ও মূল্য নির্ধারণ নীতি ভালোভাবে পড়ে সম্মত হলে "I Agree" অপশনে টিক চিহ্ন দিন।

  • শেষে "Submit" বোতামে ক্লিক করে আবেদন জমা দিন।


৭। আবেদন যাচাইকরণ ও অনুমোদন প্রক্রিয়া:

  • আবেদন জমা দেওয়ার পর পেওনিয়ার কর্তৃপক্ষ আপনার তথ্য যাচাই করবে, যা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন সময় নিতে পারে।
  • আপনার রেজিস্টার্ড ইমেইলে আবেদন সংক্রান্ত নিশ্চিতকরণ পাঠানো হবে।
  • প্রয়োজন হলে, অতিরিক্ত ডকুমেন্ট (যেমন NID/পাসপোর্টের স্ক্যান কপি, ঠিকানার প্রমাণপত্র, অথবা আপনার পেশার প্রমাণ) আপলোড করতে বলা হতে পারে। নির্দেশনা অনুযায়ী ডকুমেন্ট জমা দিন।
  • একবার অনুমোদন পাওয়া গেলে, আপনি আপনার পেওনিয়ার অ্যাকাউন্টে লগইন করে ডলার গ্রহণ শুরু করতে পারবেন।

আশা করি এই ধাপে ধাপে নির্দেশিকা আপনার জন্য পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া সহজ করবে।

Payoneer অ্যাকাউন্ট এর সুবিধা সমূহ


ডলার রিসিভ করার জন্য পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট থাকলে আপনি কী কী সুবিধা পাবেন? চলুন জানি প্রধান কিছু সুবিধা—

  • আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গ্রহণ সহজ: বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ক্লায়েন্ট বা মার্কেটপ্লেস (যেমন Fiverr, Upwork, Amazon, Google) থেকে সরাসরি আপনার পেওনিয়ার অ্যাকাউন্টে পেমেন্ট নিতে পারবেন।
  • কম ফি ও দ্রুত লেনদেন: প্রথাগত ব্যাংক ট্রান্সফারের তুলনায় কম খরচে এবং দ্রুত অর্থ স্থানান্তর সম্ভব।
  • ভার্চুয়াল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও চীনের মতো দেশে লোকাল ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মত সুবিধা পেতে পারেন।
  • পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড: অনলাইন ও দোকানে কেনাকাটা, বিজ্ঞাপন পেমেন্ট এবং এটিএম থেকে নগদ তোলার জন্য ফিজিক্যাল বা ভার্চুয়াল মাস্টারকার্ড পাওয়া যায়।
  • ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আদর্শ: Upwork, Fiverr, Freelancer.com সহ অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম থেকে পেমেন্ট নেওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম।
  • ই-কমার্স বিক্রেতাদের জন্য সুবিধা: Amazon, eBay, Shopify-এর মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সহজেই গ্রহণ করা যায়।
  • একই মুদ্রায় বিনামূল্যে লেনদেন: প্রেরক ও প্রাপক উভয় পেওনিয়ার ব্যবহার করলে পেওনিয়ার থেকে পেওনিয়ারে বিনামূল্যে ও তাৎক্ষণিক লেনদেন সম্ভব।
  • বহুমুদ্রার সমর্থন: USD, EUR, GBP, JPY, CAD, AUD সহ বিভিন্ন মুদ্রায় পেমেন্ট গ্রহণ, ধারণ ও খরচ করার সুবিধা।
  • মুদ্রা বিনিময়ের স্বাধীনতা: সুবিধামতো সময়ে বিভিন্ন মুদ্রায় রেটের সর্বোত্তম সুযোগ নিয়ে বিনিময় করতে পারবেন।
  • লোকাল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার: পেওনিয়ার থেকে সরাসরি আপনার স্থানীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সহজে টাকা পাঠাতে পারবেন।
  • বিকাশ ইন্টিগ্রেশন: পেওনিয়ার থেকে সরাসরি আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা আনার সুবিধা।
  • সহজ ও ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেস: অ্যাকাউন্ট সেটআপ ও পরিচালনা খুবই সহজ এবং ইউজার-ফ্রেন্ডলি।
  • উচ্চ নিরাপত্তা: ডেটা এনক্রিপশন, মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ও জালিয়াতি প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্বারা নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত করা হয়।
  • পেমেন্ট রিকোয়েস্ট ফিচার: ক্লায়েন্টদের কাছে সরাসরি পেমেন্টের জন্য অনুরোধ পাঠাতে পারেন, যা ইনভয়েসিং প্রক্রিয়া সহজ করে।
  • কর্পোরেট পেআউট সলিউশন: ব্যবসায়িক কাজে কর্মচারী, বিক্রেতা বা অংশীদারদের আন্তর্জাতিক পেমেন্টের জন্য কার্যকরী সমাধান।
  • ট্যাক্স ফরম ব্যবস্থাপনা: ট্যাক্স ফরম যেমন W-8BEN পূরণ ও জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করে।
  • মোবাইল অ্যাপ: যেকোনো স্থানে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আপনার পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট পরিচালনা ও লেনদেন মনিটরিং করা যায়।
  • গ্রাহক সাপোর্ট: ইমেল, ফোন ও লাইভ চ্যাটের মাধ্যমে দক্ষ গ্রাহক সহায়তা প্রদান।
  • ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সলিউশন: নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীদের জন্য অগ্রিম অর্থ বা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা (বিশেষ করে ই-কমার্স বিক্রেতাদের জন্য)।
  • পেমেন্ট ট্র্যাকিং: আপনার সকল পেমেন্টের অবস্থা সহজে ট্র্যাক করার মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।

ডলার রিসিভ করার পর পেওনিয়ার থেকে টাকা তলার পদ্ধতি


পেওনিয়ার থেকে বাংলাদেশে টাকা তোলার কিছু জনপ্রিয় পদ্ধতি:

১. সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফার:
আপনার পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি বাংলাদেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো যায়। সাধারণত ৩-৫ কর্মদিবসের মধ্যে এই লেনদেন সম্পন্ন হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে ফি হয় না বা খুব কম হয়।

২. বিকাশ (bKash) এর মাধ্যমে:
বর্তমানে পেওনিয়ার থেকে সরাসরি বিকাশে টাকা আনার সুযোগ রয়েছে। বিকাশ অ্যাপে লগইন করে রেমিটেন্স অপশন থেকে পেওনিয়ার নির্বাচন করে টাকা তুলতে পারবেন।

৩. পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড ব্যবহার:
যদি আপনার পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড থাকে, তাহলে যেকোনো এটিএম বুথ থেকে নগদ টাকা তোলা সম্ভব। এছাড়াও এটি অনলাইন বা শপিং করার জন্য ব্যবহার করা যায়।


মনে রাখবেন:
পেওনিয়ার ব্যবহারের সময় কিছু ফি প্রযোজ্য হতে পারে, যেমন কারেন্সি এক্সচেঞ্জ ফি, এটিএম উইথড্রয়াল ফি ইত্যাদি। তাই টাকা তুলার আগে ফি সম্পর্কিত তথ্য ভালোভাবে জেনে নেওয়া জরুরি।

পেওনিয়ার একাউন্ট থেকে বিকাশে টাকা আনার উপায়


পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা তোলার সহজ ধাপসমূহ

পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা আনা এখন খুবই সহজ এবং ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা। নিচে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াটি তুলে ধরা হলোঃ


১। বিকাশ অ্যাপে লগইন করুন:

  • আপনার স্মার্টফোনে বিকাশ অ্যাপ ওপেন করুন।
  • বিকাশ পিন দিয়ে অ্যাকাউন্টে লগইন করুন।

২। রেমিটেন্স অপশন নির্বাচন করুন:

  • হোম স্ক্রিনে “আরো” (More) অথবা “রেমিটেন্স” (Remittance) অপশনটি খুঁজে ট্যাপ করুন।
  • এখানে বিভিন্ন রেমিটেন্স সার্ভিসের তালিকা আসবে, সেখান থেকে “পেওনিয়ার” (Payoneer) সিলেক্ট করুন।

৩। পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করুন:

  • যদি এটি প্রথমবার পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা তোলার প্রক্রিয়া হয়, তাহলে আপনার পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট বিকাশ অ্যাকাউন্টের সাথে লিঙ্ক করতে হবে।
  • “আপনার পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করুন” (Link your Payoneer account) অপশনে ট্যাপ করলে পেওনিয়ারের লগইন পেজ আসবে।
  • পেওনিয়ার ইউজারনেম (ইমেইল) ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।
  • লগইন সফল হলে পেওনিয়ার থেকে একটি ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড (OTP) পাঠানো হতে পারে, সেটি দিয়ে ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করুন।
  • একবার ভেরিফিকেশন হয়ে গেলে, আপনার বিকাশ ও পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট সফলভাবে লিঙ্ক হয়ে যাবে।
  • লক্ষ্য করুন, এক বিকাশ অ্যাকাউন্টের সাথে শুধুমাত্র এক পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করা যায়।
  • ৪। টাকা তোলার জন্য অনুরোধ করুন:
  • অ্যাকাউন্ট লিঙ্কিংয়ের পর বা আগে থেকেই লিঙ্ক থাকলে, Payoneer থেকে টাকা তোলার অপশন দেখতে পাবেন।
  • আপনার পেওনিয়ার ব্যালেন্স দেখাবে।
  • আপনি যতো টাকা (ডলার) তুলতে চান, সেই পরিমাণ ইনপুট করুন (সাধারণত ন্যূনতম ১০০০ টাকা বা তার সমমূল্যের ডলার)।
  • অ্যাপ আপনাকে বর্তমান বিনিময় হার এবং আনুমানিক বিকাশ অ্যাকাউন্টে আসা টাকার পরিমাণ দেখাবে।
  • সব তথ্য যাচাই করে “প্রসিড” (Proceed) বাটনে ট্যাপ করুন।

৫। লেনদেন সম্পন্ন করুন:

  • চূড়ান্ত নিশ্চিতকরণ পেজ আসবে, যেখানে লেনদেনের সব বিবরণ থাকবে।
  • তথ্য পুনরায় যাচাই করুন।
  • বিকাশ পিন দিয়ে লেনদেন নিশ্চিত করুন।
  • সফল হলে বিকাশ এবং পেওনিয়ার থেকে কনফার্মেশন মেসেজ পাবেন।
  • টাকা দ্রুত আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে জমা হবে।


গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও টিপসঃ

  • ফি: পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা স্থানান্তরে সাধারণত Payoneer কর্তৃক ২% বা নির্ধারিত ফি কাটা হয়। বিকাশ এই ফি কাটে না। বিকাশ থেকে ক্যাশ আউটের জন্য নির্ধারিত চার্জ প্রযোজ্য।
  • লেনদেন সীমা: প্রতি লেনদেনে সর্বনিম্ন ১,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২,৫০,০০০ টাকা আনার সুবিধা রয়েছে। দৈনিক বা মাসিক সীমাও প্রযোজ্য হতে পারে।
  • বিনিময় হার: পেওনিয়ারের নিজস্ব বিনিময় হার প্রযোজ্য, যা বাজার মূল্যের কাছাকাছি কিন্তু একটু কম-বেশি হতে পারে।
  • নেটওয়ার্ক: লেনদেনের সময় স্থিতিশীল ইন্টারনেট সংযোগ থাকা জরুরি।
  • সার্ভিস সময়: এই সুবিধা সপ্তাহে ৭ দিন, দিনে ২৪ ঘণ্টা উপলব্ধ।

এই ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই আপনার Payoneer থেকে বিকাশে টাকা এনে ব্যবহার করতে পারবেন।


শেষ কথা


প্রিয় পাঠক,

এই আর্টিকেলে আমরা জানলাম কিভাবে Payoneer অ্যাকাউন্ট খুলে আন্তর্জাতিকভাবে ডলার রিসিভ করা যায়। বর্তমানে পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খোলা আর কোনো কঠিন বিষয় নয়। এটি একটি সহজ ও সরল প্রক্রিয়া, যেখানে ধাপে ধাপে নির্দেশনা অনুসরণ করলে আপনি দ্রুত আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য প্রস্তুত হতে পারবেন।

পেওনিয়ার মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ফ্রিল্যান্সার, অনলাইন পেশাজীবী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বিশ্বব্যাপী পেমেন্ট আদান-প্রদানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই সুবিধার কারণে আপনার কাজের সুযোগ বাড়ে এবং অর্থ লেনদেন হয় দ্রুত ও নিরাপদে।

তবে মনে রাখবেন, প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকিও বাড়ছে। তাই সর্বদা সতর্ক থাকুন এবং আপনার অ্যাকাউন্টের সুরক্ষা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিন। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, নিয়মিত আপনার লেনদেন মনিটর করুন এবং কখনোই ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না।

সফল এবং নিরাপদ পেমেন্টের জন্য এই সতর্কতাগুলো মেনে চলুন।


Previous Post Next Post